Description
“কবিতা ও রাজনীতি- এই দুটির সম্পর্ক নিয়ে বাঙালি কবিদের মধ্যে খানিকটা দ্বিধা আছে; প্রথমত, ভেবে নেওয়া হয় রাজনীতি বুঝি কবিতার শিল্পত্বকে গ্রাস করে ফেলে আর তাই রাজনৈতিক কবিতামাত্রই স্লোগানধর্মী; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন অনেক কবিই রাজনৈতিক চেতনাবশত কবিতার ভাষাগত আবছায়াটুকু লোপাট করে দেন কবিতা থেকে। এই দ্বিপক্ষীয় দ্বিধা কাটানো নিতান্ত জটিল একটি কাজ। আলমগীর নিষাদ তাঁর ছোট বই মোকসেদুল বাংলায় জটিল পথটিই বেছে নিয়েছেন এবং তাঁর পারঙ্গমতা প্রমাণ করেছেন। বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশকেন্দ্রিক লড়াইয়ে বাংলার গন্তব্য আদতে কী? এই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সমাজতাত্ত্বিক প্রশ্নটিকে নিষাদ নিয়ে এসেছেন কবিতায়।
সেক্যুলার ও ধর্মবাদী, কলকাতাকেন্দ্রিকতা ও ঢাকাকেন্দ্রিকতা, রাষ্ট্র ও সমাজ, ব্যক্তি ও জনগণ, জনসংস্কৃতি ও মূলধারার সংস্কৃতি, নিম্নবর্গ ও উচ্চবর্গ, বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব- এসব বাইনারি পরিস্থিতির কাব্যিক উপস্থাপন জলবৎতরল কোনো ব্যাপার নয়। এই প্রস্তাবনায় নিষাদ বেছে নিয়েছেন অনেক কৌশল: নবুয়তি ভাষা, পোয়েটিক টোন, মেনিফেস্টোবাদী উচ্চারণ, গল্পকথন ও সিম্বলিক কৌশল। ছোট্ট একটি বইয়ে এত এত টেকনিকের ঘনীভূত আয়োজন সত্যিই বিস্ময়কর। কিন্তু প্রশ্ন হলো: টেকনিকের তৎপরতাগুলো পাঠককে কোথায় নিয়ে যায়? নিঃসন্দেহে পাঠককে পৌঁছে দেয় ইতিহাসের রাজদরজায়।
ঔপনিবেশিকতা, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, উচ্চ সংস্কৃতির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাতাবরণ বাঙালির যে মহাবয়ান তৈরি করেছে, সেই মহাবয়ানের খাদ ও সীমানাগুলো শনাক্ত করেছেন নিষাদ। শেষতক নিষাদের কবিতা হয়ে উঠেছে একটি প্রতিরোধী বয়ান বা কাউন্টার ডিসকোর্স। এই বয়ান ধর্ম, বিপ্লব, জনতা, প্রতিরোধ, নিম্নবর্গ নিয়ে আসতে চায় রাজনীতির কেন্দ্রে। আর তাই কবিতার বইটির নাম যখন হয়ে ওঠে মোকসেদুল বাংলা, তখন আমরা বুঝে যাই বাংলার নতুন মনজিল ও মকসুদের কথা ভাবছেন তিনি, যা এখনো অস্পষ্ট, কিন্তু সমাজ ও সংস্কৃতির ভেতরে-ভেতরে অঙ্কুরোদ্গমের অপেক্ষায় বিদ্যমান।”
Reviews
There are no reviews yet.